গ্রিন টি যে নিয়মে পান করলে ওজন কমে
আপনি যদি গ্রিন টি খাওয়ার মাধ্যমে আপনার ওজন কমাতে চান।কিন্তুু কীভাবে কমাবেন তা বুঝতে পারছেন না এবং এর সঠিক নিয়ম কানুন জানেন না তাহলে চলুন জেনে নিই নিচে বিস্তারিত এই সম্পর্কে।
আপনি যদি প্রত্যেকদিন গ্রিন টি খেয়ে থাকেন এবং গ্রিন টি যে নিয়মে পান করলে ওজন কমে না জানেন তাহলে চলুন নিচে বিস্তারিত এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়।আরো জেনে নিন এর উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
পোষ্টের সূচিপত্র
- ওজন কমাতে গ্রিন টির কাজ
- গ্রিন টি যে নিয়মে পান করবেন
- খালি পেটে গ্রিন টি খেলে কি হয়
- গ্রিন টি বানানোর নিয়ম
- গ্রিন টি এর উপাদান সমূহ
- গ্রিন টিতে কি চিনি মিশাতে হবে
- গ্রিন টি খেলে কি পেটের চর্বি কমে
- গ্রিন টি এর উপকারিতা কী
- গ্রিন টি এর অপকারিতা কী
ওজন কমাতে গ্রিন টির কাজ
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার প্রয়োজন। শরীরের ওজন নানাভাবে বাড়তে পারে। এর কারণে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। শরীরের মেদ কমাতে চাইলে আপনি গ্রিন টি খান।কারণ ওজন কমাতে চাইলে ক্যালরির পরিমাণ কমাতে হবে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে গ্রিন টি খাওয়া প্রয়োজন।
ওজন কমাতে গ্রিন টি উপকারী হতে পারে, তবে এটি একটি সম্পূর্ণ সমাধান নয়। গ্রিন টিতে কিছু উপাদান রয়েছে, যেমন ক্যাফেইন ও ক্যাটেচিন (Catechins), যা শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাক হার বাড়াতে সাহায্য করে। এই কারণে, গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে কিছুটা ক্যালোরি কমায়, যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে।
গ্রিন টি যে নিয়মে পান করবেন
গ্রিন টি শরীরের গঠন ঠিক রাখতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে ঠিকি। তবে বেশিরভাগ মানুষই জানেন না গ্রিন টি পান করার সঠিক নিয়ম । কেউ বলেন যে রাতে গ্রিন টি পান করা উচিত, আবার কেউ বলে গ্রিন টি পান করা উচিত সকালে খালি পেটে। আসুন জেনে নিই ওজন কমাতে ঠিক কখন গ্রিন টি পান করা প্রয়োজন।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথে চা পান করলে শরীরে ডিহাইড্রেশন ও গ্যাস্ট্রিক আলসারের মতো সমস্যা দেখা দেয় । তাই সকালে ঘুম থেকে উঠার পরপরই চা পান করা উচিত নয়। সকালে স্বাস্থ্যকর নাস্তা খাওয়ার পর গ্রিন টি পান করা যেতে পারে। অনেকেই আছে যারা দুপুরে খাওয়ার পরই কিংবা তার আগে গ্রিন টি পান করেন। তাতে বিশেষ উপকার হয় না। গ্রিন টিয়ের উপকারিতা ভালোভাবে পেতে হলে খাওয়ার অন্তত ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর বা আগে তা পান করা উচিত।
শরীরে ওজন কমানোর জন্য রাতে ঘুমোনোর ঘণ্টা দুয়েক আগেও গ্রিন টি পান করা যেতে পারে। আবার ব্যায়াম করার আধাঘণ্টা আগে গ্রিন টি পান করলেও উপকার পাওয়া যায়।এক্ষেত্রে ঠিক কতটা পরিমাণ খেতে হবে, তাও জানা জরুরি।কখনো একদম ভরা পেটে বা খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া উচিত না।
খালি পেটে গ্রিন টি খেলে কি হয়
গ্রিন টি খালি পেটে গ্রিন টি খেলে পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বমিভাব হতে পারে। গ্রিন টির ট্যানিন এর কারণে পেটে এসিড বেড়ে যায় । ফলে পেট ব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়াও পেটে অতিরিক্ত এসিড হলে বমি হতে পারে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যে ও বাড়ে।গ্রিন টি যে নিয়মে পান করলে ওজন কমে সেদিক খেয়াল রাখতে হবে।
পেপটিক আলসার আক্রান্ত রোগীদের খালি পেটে গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। এতে তাদের সমস্যা হতে পারে।
খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে তা সরাসরি রক্তকে প্রভাবিত করে থাকে । অতিরিক্ত গ্রিন টি খাওয়ার ফলে রক্ত পাতলা হবে। শরীরে আয়রনের পরিমাণও কমিয়ে দেয় গ্রিন টি।
এজন্য রক্ত স্বল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের উচিত গ্রিন টি পান না করা। তবে কেউ যদি পান করতে চান, তবে অবশ্যই খালি পেটে নয়।হার্ট রেট ও রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় গ্রিন টি।
গ্রিন টি বানানোর সঠিক নিয়ম
গ্রিন টি বানানোর সঠিক নিয়ম -৫ গ্রাম বা একটি গ্রিন টি এর ব্যাগ নিতে হবে। তারপর পানি গরম করে স্টিল বা কাচের পাত্রে কিছুক্ষণ রেখে সামান্য ঠান্ডা করে নেওয়া জরুরি। এরপর তাতে টি ব্যাগ যোগ করে ৩ মিনিট রেখে দিতে হবে। টি ব্যাগ পুরোপুরি ভিজে গেলে টি ব্যাগ তুলে নিতে হবে আর নয়তো চা অতিরিক্ত তিতো হবে এর পর তা পান করতে হবে।
কেউ চাইলে দারচিনি গুঁড়া, এলাচ গুঁড়া, আমলা গুঁড়া,লেবু,মধু দিতে পারেন।আপনি এতে চিনিও দিতে পারেন তবে চিনি না দেওয়ায় ভালো। এর সঙ্গে আমলার রস বা আদার রসও দেওয়া যেতে পারে। গ্রিন টি যে নিয়মে পান করলে ওজন কমে তার মধ্যে বানানো ঠিক করতে হবে।
গ্রিন টি এর উপাদান সমূহ
গ্রিনটিতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি, বি ফাইভ, এ,ডি,সি,কে, ক্রোমিয়াম,জিংক,ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি উপাদান। এছাড়া এতে রয়েছে ক্যাটাচিন নামক উপাদান যা আপনার মেদ কমাতে সাহায্য করবে। এতে ক্যাফেইন, পলিফেনল, অ্যামিনো এসিড,ট্যানিন,ফ্ল্যাভোনয়ডেস ও আছে। গ্রিন টি যে নিয়মে পান করলে ওজন কমে তার সেই উপাদান সমূহ এখানে রয়েছে।
গ্রিন টিতে কি চিনি মিশাতে হবে
গ্রিন টি তে চিনি মিশিয়ে খেতে হয় না। সেটি খেতে তিতো স্বাদ যুক্ত হলেও তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আপনি যেহেতু আপনার ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি পান করতে চান সেজন্য অবশ্যই আপনাকে চিনি ছাড়া গ্রিন টি খেতে হবে। এর জন্য গ্রিন টিতে চিনি মিশানো যাবে না।
গ্রিন টিতে সাধারণত চিনি মেশানো হয় না, কারণ এটি স্বাভাবিকভাবে কম ক্যালোরিযুক্ত এবং হালকা স্বাদযুক্ত থাকে। তবে যদি আপনি চা মিষ্টি করে পান করতে চান, তাহলে আপনার ইচ্ছামতো অল্প পরিমাণ চিনি বা অন্য কোনো মিষ্টি জাতীয় উপাদান যেমন মধু যোগ করতে পারেন। তবে গ্রিন টি চিনি ছাড়া পান করাই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়।
গ্রিন টি খেলে কি পেটের চর্বি কমে
গ্রিন টি খেলে পেটের চর্বি কমে থাকে। তবে আপনি যদি নিয়মিত সঠিক পরিমাণে গ্রিন টি খান তাহলে আপনার পেটের মেদ কমবে। গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান বিপাকক্রিয়া বাড়ানোর পাশাপাশি মেদ কমতে সহায়তা করে থাকে এই পানীয় গ্রহণের ফলে পেটের মেদ কিছুটা ঝড়ার সম্ভাবনা থাকে।
গ্রিন টি খেলে খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম আবশ্যক। আর খাওয়াও কন্ট্রোল করতে হবে একেবারে লাগামহীন খাওয়ার ফলে বা কোনো ধরনের ব্যায়াম না করলে আপনি গ্রিন টির এই উপকার পাবেন না।গ্রিন টি পেটের চর্বি কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি একমাত্র সমাধান নয়।
গ্রিন টিতে থাকা ক্যাটেচিন (Catechins) এবং ক্যাফেইন মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরের ফ্যাট বার্ন করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। বিশেষ করে পেটের চর্বি বা ভিসেরাল ফ্যাট কমাতে এর কিছুটা ভূমিকা থাকতে পারে। তবে, শুধু গ্রিন টি পান করলেই উল্লেখযোগ্যভাবে পেটের চর্বি কমানো সম্ভব নয়।
গ্রিন টি এর উপকারিতা কি
গ্রিন টি এর উপকারিতা অনেক।তবে এর বিশেষ সুবিধা জানুন:-
- শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে,
- দ্রুত খাবার হজমে সহায়তা করে,
- ওজন কমাতে সাহায্যে করে,
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্যে করে,
- দাঁত সুস্থ রাখতে সাহায্য করে,
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে,
- স্কিন হেলথ ইম্প্রুভ করে,
- চিন্তা ও স্ট্রেস মুক্ত করে,
- স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্যে করে,
গ্রিন টি যে নিয়মে পান করলে ওজন কমে সে নিয়ম মানলে ওজন কমবে।তাছাড়া আপনি আপনার ওজন কমাতে পারবেন না।
গ্রিন টি এর অপকারিতা কী কী
উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকার ও রয়েছে। আর অতিরিক্ত কোনো কিছুই শরীরের জন্য ভালো নয়।
তাই সবকিছু লিমিটের মধ্যে করতে হবে।গ্রিন টি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী হলেও, অতিরিক্ত বা ভুল উপায়ে পান করলে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে। নিচে এর অসুবিধা জানুন:
- দিনে ২-৩ কাপের বেশি গ্রিন টি খাওয়া ঠিক নয়।বরং এটি আপনার শরীরের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
- ড্রিহাইড্রেশন এর কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত গ্রিন টি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।
- অতিরিক্ত গ্রীন টি খেলে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- গ্রিন টিতে থাকা ট্যানিন শরীরে খাবার থেকে আয়রন শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। তাই যারা আয়রনের ঘাটতিতে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে, বিশেষত খাবারের সাথে বা খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে।
- গ্রিন টিতে থাকা ট্যানিন পেটে অ্যাসিড বাড়িয়ে অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক, এবং বমি বমি ভাব সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে খালি পেটে খেলে এই সমস্যা বাড়তে পারে।
- রাতে পান করলেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই রাতে গ্রিন টি না খাওয়াই ভালো।
- লিভারের জন্য ক্ষতিকর।
- গ্রিন টির অতিরিক্ত গ্রহণ লিভারের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষত, যদি দিনে অনেকবার এবং বড় পরিমাণে গ্রিন টি গ্রহণ করা হয়, তাহলে এতে থাকা ক্যাটেচিন লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- খালি পেটে খাওয়াও শরীরের জন্য ভালো না।
- গ্রিন টিতে ক্যাফেইন রয়েছে, যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে নিদ্রাহীনতা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, উদ্বেগ বা অতিরিক্ত স্নায়বিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
- গ্রিন টির অতিরিক্ত গ্রহণ লিভারের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষত, যদি দিনে অনেকবার এবং বড় পরিমাণে গ্রিন টি গ্রহণ করা হয়, তাহলে এতে থাকা ক্যাটেচিন লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত গ্রিন টি পান করলে শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে এবং অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- গ্রিন টি রক্তচাপ কমাতে পারে, যা সাধারণত ভাল, কিন্তু যারা ইতিমধ্যে নিম্ন রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গ্রিন টি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী হলেও, অতিরিক্ত বা ভুল উপায়ে পান করলে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে। নিচে গ্রিন টির কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
গ্রিন টি রক্তচাপ কমাতে পারে, যা সাধারণত ভাল, কিন্তু যারা ইতিমধ্যে নিম্ন রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেল
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url